ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ
ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ ই–ভ্যালি
লোভনীয় অফারে পণ্য কিনতে ই–ভ্যালিতে অর্থ দিচ্ছেন অসংখ্য গ্রাহক। এখানে মানি লন্ডারিং হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিনলেই অর্থ ফেরতের অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য কিনলে সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি অর্থ ফেরত দেওয়ার লোভনীয় এই অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। লাভবানও হচ্ছেন অল্প কেউ, বেশির ভাগই আছেন লাভবান হওয়ার অপেক্ষায়।
কার্যক্রম শুরুর দুই বছর পার না হতেই এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। অথচ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এক বছর আট মাস বয়সী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে নানা অভিযোগও জমা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরাও আশঙ্কা করছেন, এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
অনলাইনে পণ্য কিনলে সময় বাঁচে, ঝক্কিও এড়ানো যায়। তাই ঘরের দুয়ারে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি। মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনসেট, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতেও নেমেছে।
ই-ভ্যালি জানায়, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে লেনদেন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার পণ্য। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কর দেওয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। গড়ে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রির অর্ডার পাচ্ছে তারা ১০ লাখ করে। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়ে পড়েছে ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং তারা ৪ হাজার ধরনের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাচ্ছে।
মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়ে শুরু করা এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এখনো ৫০ হাজার টাকাই। ২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি ডটকম লিমিটেড। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের এক হাজার শেয়ারের মালিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। আর চার হাজার শেয়ারের মালিক তাঁর স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল আর শামীমা নাসরিন দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।
ই-ভ্যালি যে ওয়ালেট পদ্ধতিতে টাকা রাখছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সবিহীন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৫ মার্চ দেশের সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সেবাদাতা, পেমেন্ট সার্ভিস সেবাদাতা (পিএসপি) এবং পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরের (পিএসও) উদ্দেশে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বলেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়েই পিএসপি ও পিএসওর মতো কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা আইনসিদ্ধ নয়। কেউ প্রতারিত হলে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হবে এবং অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ধরনের ওয়ালেটসেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ই–ভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘শুধু আমরা নই, পুরো ই-কমার্সই এখন উঠতির দিকে। ই-ভ্যালিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনারও চেষ্টা করছি। কিছু ভুল থাকতে পারে। তবে ভালো ব্যবসা করছি, ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যে ওয়ালেটের কথা বলছে, আমাদের সে ধরনের ওয়ালেট নেই। তাই লাইসেন্স নেওয়ার দরকার নেই।’
যোগাযোগ করলে কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী তানজীব-উল-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-ভ্যালির কার্যক্রমের ধরন অনেকটা এমএলএম কোম্পানির মতো। এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতারণার চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, ই-ভ্যালিও তাই করছে। ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি দেড় হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। কোম্পানির পরিচালকেরা সক্ষম হলে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারতেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখানে মানি লন্ডারিং হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখতে পারে।’
***** Write your comment about Evely ********