ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা হয়, শিশু মোজাহিদ মাস্ক দেয়
ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা। কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকা। করোনার বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের আওতায় বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সজাগ অবস্থান প্রশাসনের লোকজনের। সংকেত পেয়ে মোটরসাইকেল থামালেন এক যুবক। তাঁর মুখে মাস্ক নেই। মোটরসাইকেলের কাছে এগিয়ে গেল দশ বছরের এক শিশু। হাতে অনেক মাস্ক। তার একটি ধরিয়ে দিল ওই যুবকের হাতে। ওই যুবক মাস্কটি পরলেন। এরপর ১০০ টাকা জরিমানা গুনে বিদায় নিলেন।
আজ শুক্রবার ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলাকালে শিশুটির বিরামহীন মাস্ক সার্ভিস উপস্থিত সবার দৃষ্টি কাড়ে। শিশুটির নাম মোজাহিদ মিয়া। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার বাবা মাসুদ মিয়া কর্মসূত্রে দুই বছর ধরে ভৈরবে আছেন। পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ায় বসবাস পরিবারটির। মোজাহিদের মা ও বাবা দুজনই শ্রমজীবী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মোজাহিদ দ্বিতীয়। লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন তার মা–বাবা দুজনই। উপায় না দেখে পরিবারকে সাহায্য করতে মোজাহিদ মাস্ক বিক্রির পেশায় নেমেছে।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার মোজাহিদ দেখতে পায়, ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলছে। মাস্ক না পরায় অনেকের জরিমানাও করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের চোখ তাৎক্ষণিক খুঁজে বেড়ায় মাস্ক। এটা যে ব্যবসায় সফল হওয়ার সুযোগ, তা বুঝতে ভুল করেনি ছোট্ট মোজাহিদ। বুদ্ধি খাটিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দলটির কাছাকাছি স্থানে থাকতে শুরু করে সে।
বিষয়টি বুঝতে পারেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রী খীসা। তাঁরা শিশুটির প্রতি সদয়
মোজাহিদ জানাল, পড়াশোনা করাই তার ইচ্ছা। তবে মা–বাবা কাজ হারানোয় পরিবারের কষ্টের কথা সে বোঝে। এ কারণেই মাস্ক বিক্রির পেশায় যুক্ত হয়েছে। লকডাউন চলা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থেকে এই কাজ করতে চায় সে।
মোজাহিদ স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাস্ক বিক্রির পেশা বেছে নেওয়ার পেছনে অকাট্য যুক্তি তার। এখন ঘর থেকে বের হওয়াই নিষিদ্ধ। কিন্তু মাস্ক নিয়ে বের হলে পুলিশসহ কেউ কিছু বলবে না। তা ছাড়া এই মুহূর্তে মাস্কের চাহিদাও বেশি। একটি মাস্ক দেড় টাকায় কেনা, বিক্রি পাঁচ টাকায়। প্রথম দিন ২০০ জনকে মাস্ক দিয়ে ১ হাজার টাকা বুঝে নিয়েছে সে। লাভ হয়েছে ৬৫০ টাকা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রী খীসা বলেন, জীবিকা বাঁচাতে মোজাহিদ মাস্ক বিক্রির কাজে নেমেছে। তার পেশার ধরনটি মনকে নাড়া দিয়েছে। সে কারণে মোজাহিদের ব্যবসার মধ্যে ছোটখাটো একটি সেতু রচনা করে দেওয়া হয়েছে কেবল।
ইউএনও লুবনা ফারজানা বলেন, করোনাকাল চলছে এক বছরের অধিক সময় ধরে। অথচ এখনো মাস্কের জন্য গণহারে অর্থদণ্ড করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মাস্কের গুরুত্ব মোজাহিদের উপলব্ধিতে আসার বিষয়টি বেশ আশাজাগানিয়া।